দেশের সময়: দিঘায় রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার হাওড়ায় প্রশাসনিক বৈঠক সেরে দিঘা পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী। সেদিনই স্থানীয় গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের দাওয়ায় বসে আড্ডার মেজাজে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
আর এদিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রশাসনিক বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা গেল ‘চাওয়ালা’ রূপে। এদিন দিঘা থেকে উদয়পুর যাওয়ার পথে আচমকাই সায়েন্স সিটির সামনে একটি চায়ের দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করান তিনি। আর সেখানেই নিজে হাতে চা বানিয়ে সকলকে তা পান করান।
মধ্যবিত্তের পর্যটন কেন্দ্র দিঘাকে আরও বেশি করে মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে করে দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার হোটেল ভাড়া কমানোর উদ্যোগ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর জন্য মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে দিঘাকে ঢেলে সাজার একগুচ্ছ পরিকল্পনা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারই মধ্যে স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক হোটেল অনায্য ভাড়া নিচ্ছে। এর ফলে পর্যটকরা সমস্যায় পড়ছেন। হোটল ভাড়ায় নিয়ন্ত্রণ দরকার।
এদিন মমতা বলেন, “এবার পুজোয় মানুষ কাশ্মীরে বেড়াতে যাবে না। দিঘায় আসবে বেশি বেশি করে। এখন দিঘার যে ভাবে জনপ্রিয়তা বাড়ছে তাতে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়ছে। তিনি বলেন, দিঘা হল অল্প পয়সায় মধ্যবিত্তের গোয়া।” মমতা বলেন, মানুষ এখানে আসে, স্নান করে, মজা করে, সমুদ্রের পাশে বসে, চলে যায়। আগে শুধু শনি-রবিতে ভিড় হত আর এখন উইক ডেজেও ভিড় হচ্ছে। অনেকে আগে থাকতে হোটেল বুকিং করে আসেন। অনেকেই আবার ‘ইমারজেন্সি’ হিসেবে দিঘা চলে আসেন।
এসবের সঙ্গেই তিনি সভায় উপস্থিত হোটেল মালিক সংগঠনের এক সদস্যকে বলেন, “দিঘায় অনেক হোটেলে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। রেট বাড়াবেন না।” মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ মেনেও নেন হোটেল মালিক সংগঠনের ওই কর্তা। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচবি মলয় দে-কে নির্দেশ দেন সবাইকে নিয়ে টাস্ক ফোর্স তৈরি করুন। সেই টাস্ক ফোর্সে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার থেকে স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদদেরও রাখতে বলেন। শুধু দিঘা নয়, শঙ্করপুর, মন্দারমণি, তাজপুর এলাকাতেও যাতে হোটেল ভাড়া নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে তার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ জন্য হোটেল মালিক সংগঠনকে ডেটাব্যাঙ্ক করে ওয়েবসাইট তৈরির পরামর্শও দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, কাস্টমারকে লক্ষ্মী ভাবুন। একজন একবার এলে সে যেন বারবার আপনার হোটেলে আসে সেটা নজর রাখুন।”
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে হোটেল ব্যবসায়ীদের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, সরকার কী করে ঠিক করবে হোটেলের ভাড়া। গোটা বিশ্বজুড়েই হোটেল ব্যবসায় ভাড়া নির্ভর করে চাহিদা ও জোগানের উপরে। চাহিদার সময়ে হোটেল ভাড়া বাড়াই স্বাভাবিক। তাছাড়া কোনও নায্য ভাড়া, আর কোনটা অনায্য তা সরকারি টাস্ক ফোর্স কী ভাবে ঠিক করবে?
সমুদ্রের পাশে পাথওয়ে নেই পুরীতে। নেই মেরিনা ব্রিচ। নেই ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার। সব হবে দিঘায়। হিন্দুতীর্থ দিঘায় আছে ঐতিহ্যমণ্ডিত জগন্নাথ মন্দির। সেই ফাঁকটুকুও আর রাখতে চায় না রাজ্য সরকার। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দিঘায় তৈরি হচ্ছে জগন্নাথ মন্দির। এক বছর আগেই সেই ঘোষণা করেছিলেন মমতা। এবার সেই কাজ দ্রুতু শুরু ও শেষ করার নির্দেশ দিয়ে দিলেন।
এদিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রশাসনিক বৈঠক হয় দিঘায়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পুরীর মন্দিরের সমান উচ্চতার জগন্নাথ মন্দির বানানো হবে দিঘায়। পুরনো জগন্নাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করে দু’একর জমির উপরে তৈরি হবে মন্দির। সরকার ধর্মীয় মন্দির বানাতে পারে কিনা সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। তার জন্য প্রশাসনিক ভাবে এই মন্দির প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে– জগন্নাথ সংস্কৃতি কেন্দ্র।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দিঘায় এখন মানুষ শুধু বেড়াতে আসেন। এবার মন্দির তৈরি হলে বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পুজোও দেওয়া যাবে। মঙ্গলবারই প্রস্তাবিত মন্দির এলাকায় যান মমতা। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘পুরীর আদলে এখানে জগন্নাথ মন্দির হবে। পুরীর মন্দিরের সমানই উচ্চতা হবে। সমুদ্রের পাশে অনেকটা জায়গা আছ। সরকার এটা করবে। কারণ এটা পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত। এটা একটা ধর্মীয় তীর্থ এবং সংস্কৃতি কেন্দ্র।’’
কারা মন্দির তৈরি করবে তা নিয়েও এদিন প্রশাসনিক বৈঠকে আলোচনা হয়। প্রথমে মমতা জানান, বাইরের লোক না ডেকে কেএমডিএ বা পিডব্লুডির হাতেই থাক নির্মাণের দায়িত্ব। পরে অবশ্য তিনি বলেন, পুরীর মন্দিরের মতো ভাষ্কর্য যারা করতে পারবে তাদেরই দেওয়া হোক বরাত।
শুধু মন্দির নির্মাণ নয়, দিঘায় আধুনিক মানের পার্কিংয়ের জায়গা থেকে সমুদ্রের ধারে ৭ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ চালু করা-সহ একগুচ্ছ পরিকল্পনাও ঘোষণা করেন মমতা। তিনি জানান, দেশ-বিদেশের পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে দিঘায় অত্যাধুনিক সুবিধাযুক্ত হোটেল গড়ার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে যাতায়াতের সুবিধার জন্য প্রতিদিন কলকাতা থেকে দিঘা পর্যন্ত হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, দিঘার সমুদ্রে সি প্লেন নামানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মমতা।