দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জাতীয় পরিবেশ আদালত এবং কলকাতা হাইকোর্টের পাশাপাশি শীর্ষ আদালতও রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু তার পরও আজ, শুক্রবার সকালে পুজোর উপকরণ নিয়ে একদল ভক্ত রবীন্দ্র সরোবরে ঢুকতে যান। রবীন্দ্র সরোবরের ১, ২ এবং ৩ নম্বর গেটে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশ ভক্তদের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কিছু ক্ষণ পুলিশের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটিও চলে। তবে পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে এনেছে পুলিশ।
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও ছটপুজো করতে চেয়ে রবীন্দ্র সরোবরে বাইরে বিক্ষোভ দেখালেন ভক্তেরা। যদিও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সাময়িক ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে। ভক্তদের অবশ্য দাবি, চার ঘণ্টার জন্য ছট পুজো করলে পরিবেশের কোনও ক্ষতি হবে না। তাই তাঁদের যেন অন্তত চার ঘণ্টার জন্য পুজোর অনুমতি দেওয়া হয়।
পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই গতবছর রবীন্দ্র সরোবরে পালিত হয়েছিল ছট পুজোর আচার৷ সরোবরের গেটের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুক পড়েছিল পুণ্যার্থীদের দল৷ এবার যাতে তা কোনওভাবেই না হয় তারজন্য সজাগ রয়েছে প্রশাসন। কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেল হয়েছে গোটা রবীন্দ্র সরোবর চত্বর। টিন, বাঁশ দিয়ে ঘেরা হয়েছে গোটা সরোবর এলাকা। আজ থেকেই শুরু হচ্ছে ছটপুজোর নিয়ম নীতি।
কোনওভাবেই যাতে পূণ্যার্থীর দল সরোবরে ঢুকে পড়তে না পারে তারজন্য আদালত আগেই গত ১৯ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাতভ্রমণকারীদের ভ্রমণের ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গাড়ি অথবা লোকজনের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।
এবার রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করা যাবে না, তা বৃহস্পতিবারই জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বহাল রাখল জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়। রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজো করার জন্য শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, “রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো নিষিদ্ধ করে জাতীয় পরিবেশ আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতে কোনও রদবদল করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশও জারি করবে না সুপ্রিম কোর্ট।” এদিকে সুভাষ সরোবরেও ছটপুজোর উপরে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে কলকাতা হাইকোর্টও।
ফলে রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবরে এ বছর ছট পুজো করা যাবে না বলেই আদালতের নির্দেশ বহাল থাকছে। পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি করোনা রোধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান হয়েছে। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের এই রায় মেনে চলার আবেদন করলেন। একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ আমাদের মেনে চলতে হবে। ছোট ছোট দলে দূরত্ববিধি মেনে ছটপুজোয় আপনারা অংশ নিন। সরকার এবং পুলিশ–প্রশাসন পাশে রয়েছে।’
আদালতের রায়ের পরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাজ্য প্রশাসন। সকাল থেকেই রবীন্দ্র ও সুভাষ দুটি সরোবর চত্বরেই মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। জাতীয় সরোবরের গোটা চত্বর ঘিরে ফেলা হয়েছে। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকেই এবার আরও সজাগ হয়েছে প্রশাসন। গত বছর আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করেই রবীন্দ্র সরোবরের গেটের তালা ভেঙে ঢুকে পড়েছিল একদল যুবক। তারপরেই চলে সেখানে আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করে ছটপুজো। সেবারও জল দূষণ রোধে ছট পুজো বন্ধ করার জন্য রবীন্দ্র সরোবরের চার পাশ ঘিরে ফেলা হয়েছিল কলকাতা পুরসভার পোস্টার, ব্যানারে। সেই সব পোস্টার, ব্যানারও ছিঁড়ে ফেলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ ছিল রাজনৈতিক কারণেই প্রশাসন পুণ্যার্থীদের আটকায়নি৷ এমনই অভিযোগ ছিল পরিবেশকর্মীদেরও৷ তাই এবার আগে ভাগেই সজাগ হতে চাইছে প্রশাসন।