সোমা দেবনাথ, দেশের সময়: চতুর্থীর সন্ধেতেই কলকাতাকে টেক্কা দিয়ে ঢল নামল বনগাঁয়। বোধনের আগেই শুরু হয়ে গেল পুজো। বেজে উঠল ঢাক। আলোর গয়নায় সেজে উঠেছে শহর। নতুন জামাকাপড় পরে ইছামতী নদীর দু’পারে , সর্বত্র মণ্ডপ আর প্রতিমা দর্শনে ছুটে গেছেন উৎসাহীরা।
গ্রামের মানুষ থেকে শহরের বাসিন্দা, পা মিলিয়েছেন সকলেই। ফলে বিকেল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় বেড়েছে। চতুর্থীতেও অনেক পুজোর উদ্বোধন হয়েছে। যেমন বনগাঁ মতিগঞ্জের ঐক্যসন্মেলনী পুজো মন্ডপ উদ্বোধন করেন মুকুল রায়, উপস্থিত ছিলেন অর্জুন সিং, শুভ্রাংশু রায়,বিশ্বজিৎ দাস(উত্তরের বনগাঁরবিধায়ক )
ক্লাবের কর্ণধার দেবদাস মন্ডল বলেন, শারদ উৎসবের মতো ঐক্যসন্মেলনী ক্লাবও বনগাঁর মানুষের ক্লাব এই পুজো আমার নয়,এই পুজো বনগাঁর প্রতিটি মানুষের পুজো,আমি তাদের শরীক মাত্র৷
এবারে ঐক্য সন্মেলনীর থিম ‘শিশু শ্রমিক’ সন্ধে থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের। অনেকেই রাতে গাড়ি নিয়ে পুজো দেখতে বেরিয়ে পড়েন। আয়রনগেট স্পোর্টিং ক্লাব, প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাব ও ১২’র পল্লী স্পোর্টিং ক্লাব, সর্বত্রই ছিল একই দৃশ্য।
প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাব এবারে পদ্মাবতী সিনেমার সেটের রাণী পদ্মাবতীর প্রাসাদের অনুকরণে পুজোমণ্ডপ তৈরি করছে। এই ক্লাবের পুজোর অন্যতম আকর্ষণ পুজোমণ্ডপ সংলগ্ন মাঠের চারদিক জুড়ে থাকা মেলা।
বনগাঁর সুভাষনগর সেবা সমিতির ৭২তম বর্ষের থিম স্বপ্নালোকে মায়ের আগমন। ব্যাঙের ছাতার অনুকরণে পুজোমণ্ডপ তৈরি হচ্ছে।
৭১তম বর্ষে গান্ধীপল্লী বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের থিম স্বপ্নমহল। বসাকপাড়া স্পোটিং ক্লাব, দত্তপাড়া, মুস্তাফিপাড়া, আমলাপাড়া স্পোর্টিং ক্লাব এবং শিমুল তলা স্পোর্টিং ক্লাব তাদের সাধ্যমতো পুজোর আয়োজন করেছে।
শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সারতে দোকানে দোকানেও ছিল লাইন। থিমের সঙ্গে সাবেকিয়ানা, জমে উঠেছে এবারের পুজোর লড়াই। আয়োজনে পরস্পর পরস্পরকে টেক্কা দিতে কেউ চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি।
অভিযান সংঘ থেকে পেয়াদা পাড়া, আবার মতিগজ্ঞ ৩নং টালিখোলা এগিয়ে চলো সংঘ থেকে জ্ঞাণবিকাশিনী সঙ্ঘ– এবং উজ্জ্বল সঙ্ঘ–সহ অন্যান্য নামকরা পুজো, সর্বত্রই ছিল উৎসাহীদের সমাগম। সন্ধেয় পুজো মন্ডপ গুলি উদ্বোধনের পর দর্শকদের জন্য তা খুলে দেওয়া হয়। ভিড় সামলাতে শহরের বেশ কিছু রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার পঞ্চমীর সন্ধ্যায় উদ্বোধন শিমুলতলা আয়রনগেট স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোমণ্ডপ। ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয় , চতুর্থীর দিনই মন্ডপের গেট খুলে দিতে হয়েছে দর্শনার্থীদের অনুরোধে,আর বন্ধ রাখা গেল না। এমন ভিড় হচ্ছিল যে, বাধ্য হয়ে আমরা খুলে দিয়েছি। উল্লেখ্য, এই পুজোর এক ক্লাব কর্তার কথায় ভিড় সামলানোর দায়িত্ব পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে,পাশা পাশি ক্লাব সদস্যরা থাকছে সর্বক্ষণ।
এবার পুজোয় ‘অসুর’ হতে পারে বৃষ্টি। এই আশঙ্কাটা সকলের মধ্যেই কাজ করছে। ফলে শহরের বাইরের বা শহরের বাসিন্দা প্রতি বছর যাঁরা পুজো দেখতে বেরোন তাঁরা অনুকূল আবহাওয়ার সুযোগ পেয়ে এদিন বিকেলেই পুজোদর্শনে বেরিয়ে পড়েন। আবার পঞ্চমী বা ষষ্ঠীতে যাঁরা বেড়াতে যাওয়ার ট্রেন বা বিমান ধরবেন, এদিন তাঁরাও পুজো দেখার কাজটি সেরে ফেলেছেন।
বিকেল থেকেই হেঁটে বা গাড়ি নিয়ে পুজো দেখতে বেরিয়ে পড়েন দর্শনার্থীরা। রাস্তায় রাস্তায় ছিল গাড়ির লম্বা লাইন। স্বল্প দূরত্বের মধ্যে পুজো দেখতে দর্শনার্থীরা যেমন হাঁটাপথে রওনা দিয়েছেন, তেমনি দূরের পুজো দেখতে ভরসা করেছেন রুটের বাস ও বেক্তিগত গাড়ী।
যে সমস্ত ক্লাব এখনও প্রতিমা নিয়ে যায়নি, তাদের অধিকাংশই এদিন প্রতিমা নিয়ে গেছে। বাড়িতে যাঁরা পুজোর আয়োজন করেছেন এদিন তাঁরাও প্রতিমা নিয়ে যান। বৃষ্টির ভয়ে প্রতিমার গায়ে প্লাস্টিকের শিট জড়িয়ে দেন তাঁরা। ফি–বছরের মতো শহরের রাস্তায় এবারও ভিড় সামলাতে আছেন বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা।
চতুর্থীর সন্ধ্যায় পূর্ব কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্য মন্ডিত পুজো শ্রী ভূমি স্পোর্টিং ক্লাব৷ এবছর তাদের ৪৭ তম বর্ষে তারা তুলে ধরেছেন মৌর্য্য এবং রাজস্থানি ঘরানার স্থাপত্যমন্ডিত সম্পূর্ণ কল্পনা প্রসূত এক রাজ্প্রাসাদ।