দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ
লোকসভা ভোটের পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল উত্তর চব্বিশ পরগণার সন্দেশখালি।
রাজনৈতিক সংঘর্ষে সে বার বিজেপি-র দুই কর্মী মারা গিয়েছিলেন। এক কর্মী এখনও নিঁখোজ। এ বার দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ গেল ভিলেজ পুলিশের।
সন্দেশখালির খুলনা গ্রামের আতাপুর ফেরিঘাটের কাছে শুক্রবার রাতে মদ-জুয়ার ঠেক ভাঙতে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু পাল্টা দুষ্কৃতীদের বোমা-গুলিতে জখম হন সাব ইনস্পেক্টর অরিন্দম হালদার, ভিলেজ পুলিশ বিশ্বজিৎ মাইতি ও সিভিক ভলেন্টিয়ার বাবুসেনা সিংহ। এঁদের মধ্যে বিশ্বজিতের অবস্থা ছিল সব থেকে গুরুতর। তাঁকে শেষমেশ বাঁচানো যায়নি। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, হৃদপিন্ডের আয়োটা ছিঁড়ে যাওয়ার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় বিশ্বজিতের। শনিবার বিকেলে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।
সন্দেশখালির এই ঘটনা নতুন করে হই চই ফেলে দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। প্রশ্ন উঠেছে, দুষ্কৃতী-বন্দুকবাজরা কি এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে! পুলিশের নিরাপত্তার যদি এই হাল হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে টহলদারিতে বেরিয়ে খুলনা গ্রামের আতাপুর ফেরিঘাটের কাছে বেশ কয়েকজনকে রাস্তার উপর বসে মদ খেতে দেখে পুলিশ। সেখানেও জুয়ারও ঠেক বসেছিল। তাদের সেখান থেকে উঠে যেতে বললে শুরু হয় বাদানুবাদ। তারপরেই পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বোমা ছোড়া শুরু করে দুষ্কৃতীরা। গুলি লাগে সাব ইনস্পেক্টর অরিন্দম হালদার, সিভিক ভলান্টিয়ার বাবুসোনা সিংহ ও ভিলেজ পুলিশ বিশ্বজিৎ মাইতির গায়ে। তাঁদের সঙ্গে থাকা আরও এক গ্রামবাসীও গুলিতে জখম হন। ওই ব্যক্তি সরকারিভাবে না হলেও ভিলেজ পুলিশেরই কাজ করেন বলে জানা গেছে। গুলি বোমার শব্দ পেয়ে ছুটে আসেন আশেপাশের মানুষ। তাঁরাই আহত পুলিশকর্মীদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দুজনকে পাঠানো হয় কলকাতায়।
খবর পেয়ে সন্দেশখালি, হাড়োয়া, মিনাখাঁ থানা ও বসিরহাট পুলিশ লাইন থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দুষ্কৃতীদের খোঁজে শুরু হয় তল্লাশি। শনিবার ভোর রাতে ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এলাকার দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী কেদার সর্দার ও বিধান সর্দারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই দু’জনের বিরুদ্ধেই খুন-ধর্ষণ-তোলাবাজি ও ডাকাতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
শুক্রবার রাতে কী কারণে পুলিশের উপর হামলা হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা জানান, এই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বছর কয়েক ধরে সুন্দরবনের ত্রাস হয়ে উঠেছে শেখ শাজাহানের কাছের লোক শাসক দলের ঘনিষ্ঠ কেদার সর্দার। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর একদা সিপিএম-ঘনিষ্ঠ শেখ শাজাহান তৃণমূলে যোগ দেন। এ বারের লোকসভা ভোটের ফল বেরোনোর পর গত ৮ই জুন বিজয় মিছিলকে ঘিরে সংঘর্ষে সন্দেশখালিতে খুন হন দুই বিজেপি কর্মী প্রদীপ মণ্ডল ও সুকান্ত মণ্ডল। নিখোঁজ হয়ে যান দেবদাস মণ্ডল নামে আরও এক বিজেপি কর্মী। সে ঘটনায় তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। ঘটনায় নাম জড়ায় শেখ শাজাহান ও বাবু মাষ্টারের।
গ্রামের মানুষ জানান, বাম আমলে সুন্দরবনের অলিখিত শাসন ক্ষমতা থাকলেও কোনও পদ পাননি তাঁরা। তৃণমূল কংগ্রেসের ছত্রছায়ায় এসে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন বাবু মাষ্টার। শেখ শাজাহান তাঁরই সাকরেদ। আর খুলনা অঞ্চল শেখ শাজাহানের হয়ে দেখাশোনা করে কেদার সর্দার ও তার ভাই বিধান সর্দার। বিভিন্ন সমাজবিরোধী কাজকর্মের জন্য এর আগেও বহুবার জেলে গিয়েছে দুই ভাই।
তবে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় তাঁদের দলের কেউ কোনওভাবে জড়িত নয় বলেই জানিয়ে দিয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
অন্যদিকে বিজেপি-র মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেন, বাংলায় এখন জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। আইনশৃঙ্খলা বলে কোনও বিষয় নেই। যে রাজ্যে পুলিশের জীবনই বিপন্ন সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থাটা কী তা বোধগম্য। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী। আইনশৃঙ্খলার অবনতির দায় তাঁকেই নিতে হবে।”