দেশের সময়: রাজ্যে করোনা সংক্রমণের সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করতে শুরু করল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশী সোচ্চার সিপিএম।মুখ্যমন্ত্রী করোনা মোকাবিলাকে একেবারে নিজের সরকারের প্রচার অভিযান করে তুলতে চাইছেন বলে অভিযোগ সিপিএমের।এ বিষয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছেন,মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে দলবল নিয়ে বাজার থেকে হাসপাতালগুলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে তিনি যেন এই ভয়াবহ বিপদের থেকেও নিজের ভাবমূর্তি প্রচারে বেশী ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন।বিমানবাবু প্রশ্ন তোলেন প্রশাসমিক প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীতো একজায়গায় বসেই নির্দেশ দিতে পারেন।তিনি মানুষকে জটলা বা ভিড় করতে মানা করছেন অথচ নিজেই বার বার সেই নির্দেশ ভাঙছেন।বিমানবাবুর মতে তিনিই একমাত্র ত্রাতা এই প্রচারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত বিরোধীদের বাদ দিয়ে করোনা মোকাবিলার নামে এক ধরনের নাটক করে চলেছেন।বিমানবাবুর অভিযোগ প্রকৃত তথ্য চেপে গিয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে রাজ্যবাসীকে,যা আগামী দিনে ভয়াবহ বিপদ হিসেবে সামনে আসতে চলেছে।
প্রসঙ্গত রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কতজনের মৃত্যু হয়েছে করোনা সংক্রমণে তা নিয়ে রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্যে বিভ্রান্তি ধরা পড়েছে।১ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত সমস্ত মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে জানানো হতে থাকে রাজ্যে করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ৬।তবে ঐ দিনই বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩।কোন মন্ত্রে মৃত্যুর সংখ্যা একলাফে ৩ কমে গেল?এ প্রশ্ন তুলেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনতে শুরু করেছে বিরোধীরা।
মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি ৬জন মারা গেলেও তারা সবাই করোনা সংক্রমমে মারা যান নি।এদের কারোর নিউমোনিয়া ও অন্য অসুস্থতা ছিল,তাই তিনজন বাদে অন্যরা করোনা তে মারা গেছে বলা যায় না।বিরোধীদের প্রশ্ন তাই যদি হয় তবে কেন করোনায় মারা না যাওয়া ব্যক্তিদের দেহ বাড়ির লোকের হাতে তুলে দেওয়া হোল না?কেন তাদের দেহ পুলিশি নিরাপত্তায় করোনায় মৃত ব্যক্তিদের মতোই দাহ করা হোল?এ প্রশ্নের কোন উত্তর অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় নি।
তাই বিরোধীরা দাবি করতে শুরু করেছে যে এ রাজ্যের সরকার তথ্য গোপন করে পরিস্থিতিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে।এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশী সোচ্চার সদ্য রাজ্যসভায় নির্বাচিত সিপিএম সদস্য ও বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।তাঁর মতে রাজ্য সরকার যেভাবে তথ্য গোপন করে বিষয়টা হালকা করে দিতে চাইছে তাতে বিপদ ভয়াবহ হবে।
বিকাশবাবু মনে করেন করোনার মত মারণ ভাইরাসকে মোকাবিলা করতে যেখানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলি হিমশিম খাচ্ছে সেখানে রাজ্য একা তার মোকাবিলা করতে অক্ষম।দরকার সমস্থ দলের সম্মিলিত প্রয়াস ও সাহায্য।মুখ্যমন্ত্রী তা না করে শুধু প্রচার পাওয়ার তাড়নায় নিজেই যাবতীয় সাবধানতার গন্ডী ভাঙছেন এবং বিপদকে ছেট করে দেখাতে তথ্য চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।বিকৃত তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন যার মূল্য রাজ্যবাসীকে দ্তে হবে বলে মনে করেন বিকাশরঞ্ন ভট্টাচার্য়।
শুধু মৃতের তালিকাই নয় এই মুহূর্তে কতজন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তা নিয়েও রাজ্য সরকারের তথ্যে বিভ্রান্তি ধরা পড়ছে।৩১ মার্চ রাজ্য সরকারের তথ্যে বলা হয়েছিল হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির সংখ্যা দেড় লক্ষেরও বেশী একদিন পর সেই পরিসংখ্যান বদলে বলা হয় সেই সংখ্যা ৫০হাজারের কিছু বেশী।স্বাভাবিক ভাবেই প্র্শ্ন উঠতে শুরু করেছে কেন সরকারি তথ্য এভাবে সময়ে সময়ে বদলে যাচ্ছ?
রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের কর্মী ও সমর্থকদের ত্রাণ ও সাহায্য নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না,পুলিশ বাঁধা দিচ্ছে অন্যদিকে শাসক দল ও মুখ্যমন্ত্রী একতরফা প্রচার করে নিজের ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করছে।মানুষ আসল তথ্য জানতে না পারলে এ রাজ্যের পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান জানান,রাজ্য সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে না বলেই এরকমভাবে তথ্য চাপা দিতে সক্রিয়,এটা কিন্তু ডেঙ্গু নয়,এটা মারণ ভাইরাস যা গোটা বিশ্বকে ত্রস্ত করে তুলেছে তাই সত্য গোপন করে রাজ্য সরকার রাজ্য বাসীর জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে চলেছে।মহামারি বা অতিমারি রুখতে দরকার সত্যের সামনে দাঁড়ানো মুখ্যমন্ত্রী এখনও নিজেকে সংকীর্ণ রাজনীতির ঘেরাটোপে বন্দি রেখেছেন,এটা খুবই দুঃখের কথা বলে মনে করেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান।
রাজ্য সরকারের এই তথ্য গোপনের প্রয়াসকে তীব্র আক্রমণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে শুরু করেছে সিপিআইএমের দৈনিক মুখপত্র গণশক্তি।এই পত্রিকায় মুখ্যমন্ত্রীর কথা ও কাজের ফারাক দরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি তথ্য কীভাবে নানা সময় পাল্টে যাচ্ছে তার উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।রাজ্য সরকার যেভাবে তথ্য গোপন করার প্রয়াস শুরু করেছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের বিশিষ্ট নাগরিকদের একাংশও।নাট্যকার ও অভিনেতা কৌশিক সেনের বক্তব্য,মুখ্যমন্ত্রীতো নিজেই সর্বদলীয় বৈঠকে ঘোষণা করেছিলেন এখন রাজনীতি বাদ দিয়ে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে মানুষের স্বার্থে তবে কেন তিনি নিজেই এভাবে বিপদকে লঘু করতে তথ্য গোপন করতে ব্যস্ত হয়ে উঠবেন?কেন তিনি সততার সঙ্গে সত্যের মুখে দাঁড়িয়ে লড়াই করবেন না?কৌশিকের প্রত্যাশা মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই ঘটনার ভয়াবহতা বুঝে সবাইকে নিয়ে এই বিপদ মোকাবিলা করতে ঝাপিয়ে পড়বেন।
তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কৌশিক সেনের মত এতটা আশাবাদী হতে পারছেন না,সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য তাই বলে দিলেন ামরা তো মমতা চিনি রাজনৈতিক সংকীর্মতা অতীক্রম করা তাঁর পক্ষে কঠিন।একই সঙ্গে বিকাশবাবুর হুশিয়ারি এই ভয়াবহ সময়ে তথ্য গোপনের যে চেষ্টা মমতা করছেন তাতে ইতিহাসও তাংকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।