সুনসান বনগাঁ হারাধন আঢ্য সুপার মার্কেট:
দেশের সময় ,পেট্রাপোল: বছর শেষের মাসে করোনা আতঙ্কের কারণে সীমান্তের পণ্য পরিবহণের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন চৈত্র সেলের বাজারেও মন্দা দেখা দিয়েছে।আগের মতো উৎসবের মেজাজে কেনাকাটার জন্য ভিড় কোথাও উপচে পড়ছে না। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও রাতের ঘুম কাড়তে শুরু করেছে মারণ করোনা।
করোনা আতঙ্কের জেরে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙায় পণ্য পরিবহণ কমতে শুরু করেছিল আগে থেকেই। গত সপ্তাহের তুলনায় কমপক্ষে ১০০ গাড়ি পণ্য পরিবহণ কমে গিয়েছে। প্রত্যেকদিন পণ্য পরিবহণের পরিমাণ কমছে। আতঙ্কের কারণে অধিকাংশ চালক ও খালাসি লরি নিয়ে বাংলাদেশ যেতে চাইছেন না। বছর শেষের মাসে পণ্য পরিবহণ কমে যাওয়ায় চরম সঙ্কটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙা সীমান্তের স্থল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে লরি বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে যাতায়াত করে। বছর শেষের মাসে এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। বছরের বিভিন্ন সময় গড়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে সাড়ে ৫৫০ গাড়ি গেলেও বছর শেষে তা বেড়ে ৫৫০ থেকে ৬৫০ গাড়ি হয়ে যায়। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে দেশে করোনা আতঙ্ক তীব্র হয়েছে।
মহারাষ্ট্র, গুজরাত, দিল্লি সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কারখানার উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। লরির চালক ও খালাসিরাও চরম আতঙ্কে ভুগছেন। ইতিমধ্যে এই দুই সীমান্ত দিয়ে সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহ থেকে এই দুই স্থল বন্দর দিয়েও পণ্য পরিবহণের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে।
এখন পেট্রাপোল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ গাড়ি চলছে। পণ্য পরিবহণের গাড়ি কমার পাশাপাশি যাত্রীদের যাতায়াত কমে যাওয়ায় পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙা বন্দরকেন্দ্রিক অর্থনীতিও মুখ থুবড়ে পড়েছে।
হোটেল ও মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র খোলা থাকলেও কর্মীরা কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন। টোটো অটো ফাঁকা কুলিরাও স্রেফ বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট এন্ড স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, পেট্রাপোল স্থল বন্দর দিয়ে প্রত্যেক বছরে ২০ থেকে ২১ হাজার কোটি টাকার সামগ্রী রপ্তানি ও আমদানি হয়। বছর শেষের মাসগুলিতে পণ্য পরিবহণ বেড়ে যায়। কিন্তু করোনা আতঙ্কের জেরে এবার মার্চ মাসে আমদানি ও রপ্তানি কমে গিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ গাড়ি যাতায়াত করছে। শুনছি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যা খবর আমরা পেয়েছি, তাতে আগামী দিনে পণ্য পরিবহণ আরও কমবে। কারণ রাস্তাতেও পণ্য ভর্তি গাড়ি কম আছে।
পেট্রাপোল সীমান্তের পরিবহণের সাথে যুক্ত অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে সমস্ত বাস পেট্রাপোল থেকে যাত্রী নিয়ে কলকাতায় যাতায়াত করে,সেই সমস্ত বাসে প্রচুর পরিমাণে বিদেশিরাও যাতায়াত করেন,সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাঁরকাটা পেড়িয়ে অনুপ্রবেশকারিদের একটা বড় অংশের যাত্রী স্থানীয় মানুষ পরিচয় দিয়ে এই সমস্ত বাসে চেপে অনায়াসে চলে যাচ্ছেন কলকাতায়, তাদের কোন রকম স্থাস্থ্য পরীক্ষা করার সুযোগ হচ্ছে না প্রশাসনের পক্ষ্যে। বাস পরিবহণের সাথে যুক্ত এক কর্মীর কথায় কোন যাত্রী যখন বলেন আমরা স্থানীয় মানুষ তখন তাঁকে বাসে উঠতে না বলতে পারিনা,যদিও বেশির ভাগই ভিসা পাশপোর্ট দেখে নেওয়া হয়। এখন প্রশ্ন হল,এই সমস্ত বাস কতটা নিরাপদ এই মুহুর্তে,কোন সংক্রমণ আছে কিনা বাস গুলিতে সেটাই বড় প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে প্রশাসনকে৷
ফেডারেশন অব ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রাক অপারেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, করোনা আতঙ্কের জেরে পণ্য পরিবহণ অনেক কমে গিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কারখানায় উৎপাদন কমে গিয়েছে। গাড়ির চালক, খালাসি ও সামগ্রী লোডিং ও আনলোডিংয়ের কাজ করা শ্রমিকরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গুজব মারাত্মক আকারে ছড়িয়েছে। আতঙ্কের কারণে চালক ও খালাসিরা বাংলাদেশে লরি নিয়ে যেতে চাইছেন না। যতদিন যাচ্ছে সমস্যা আরও বাড়ছে।সীমান্তে পণ্য পরিবহণ যেমন ধাক্কা খাচ্ছে।
অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন বাজারের দোকানপাটেও কেনাকাটার ভিড় অনেক কম। মূলত এই সময় বারাসত, বনগাঁ, বসিরহাট, হাবড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় কাপড় ব্যবসায় জোয়ার দেখা যায়। বড় দোকানগুলির পাশাপাশি ফুটপাথের দোকানেও চৈত্র সেল দেওয়া হয়। শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ কাপড় কিনতে ভিড় জমান শহরের বিভিন্ন দোকানে। ইতিমধ্যে শহরের বিভিন্ন দোকানে চৈত্র সেল শুরু হয়ে গেলেও এখনও সেভাবে কেনাকাটায় জোয়ার আসেনি।
করোনা আতঙ্কের জেরে এবার আদৌ ব্যবসা কেমন হবে তা নিয়ে ব্যবসায়ীরাও আতঙ্কে পড়েছেন। বনগাঁ হারাধন আঢ্য সুপার মার্কেট সভাপতি মোহিত ঘোষ বলেন চৈত্র সেলের বাজার নিয়ে ব্যাপক চিন্তায় রয়েছেন বস্ত্রব্যাবসায়ীরা,কোন বেচাকেনা নেই,ক্রেতাদের দেখা মিলছেনা,সারা মাস কিভাবে কাটবে কেউ জানেনা৷ আর এক বস্ত্র ব্যবসায়ী বাপন সাহা বলেন, চৈত্র সেলের কথা ভেবে কয়েক লক্ষ টাকার সামগ্রী কিনে এনেছি।
কিন্তু কেনাকাটায় মানুষের উৎসাহ সেইভাবে এখনও দেখছি না। যতদিন যাচ্ছে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কী হবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। এক কথায় পেটে টান পড়েছে৷ বনগাঁ,বাগদা এবং চাকদহে যে সমস্ত হাট বসে সেখানেও এক প্রকার মাছি তাড়াচ্ছেন ব্যাবসায়ীরা।বনগাঁর এক স্বর্ণ ব্যাবসায়ী বিনয় সিংহ জানান,২০০০ সালের বন্যায় জলে ডুবে ছিল বাজার দোকান ঘর,বাড়ি সব কিছু,কিন্তু তার থেকেও করুন অবস্থা হয়েছে এবার করোনার আতআতঙ্কে। সোনা তো দূরে থাক রুপোও কিনছে না কেউ।অনেক ক্রেতা বলছেন আগে করোনা যাক তারপর কেনা কাটা ৷এক কথায় করোনার ত্রাসে সীমান্ত লাগোয়া শহরের সব ব্যাবসার দরজা বন্ধ প্রায়৷
এদিন বনগাঁ শহরের’ ট’ বাজার সংলগ্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল বেশ কিছু মাংসের দোকানের সামনে নোংরা আবর্জনায় ভর্তি এবং মাংস ধোয়া জল রাস্তায় ছড়াচ্ছে নির্বিকারে, বনগাঁ পুরসভার পক্ষ্য থেকে ব্যাবস্থা নেওয়া হলেও কাজের কাজ কিচ্ছু হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসিন্দাদের৷
পথ যাত্রী বনগাঁ শক্তি গড়ের বাসিন্দা প্রতীভা দাশ জানান এই পথ দিয়ে অন্য সময়ও দুর্গন্ধের জেরে যাতায়াত করা যায়না। নাকে কাপড় দিয়ে তবেই রাস্তা পার হতে হয়৷স্থানীয় মেডিসিন এর এক ব্যাবসায়ী
অশোক দাস বলেন পুরসভা প্রতিদিন এলাকার জজ্ঞাল পরিষ্কার করে কিন্তু দুর্গন্ধের জেরে এলাকায় টেকা দায় হয়েপড়েছে, মুলত বিভিন্ন মাংসের দোকানের আবর্জনায় এরকম হচ্ছে বলে ধারনা। বেশ কয়েক বার পুরসভা কতৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছেকিন্তু কোন কাজ হয়নি বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা৷ করোনা নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই এই সমস্ত মাংস বিক্রেতাদের৷ অথচ পাশেই রয়েছে বনগাঁ পুরসভা পরিচালিত স্বাস্থ্যদীপ ডায়ালিসিস সেন্টার৷ স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক আর ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের৷
বনগাঁ পুরসভার পুর প্রধান শঙ্কর আঢ্য দেশের সময় কে অনেক আগেই জানিয়েছিলেন’ ট’ বাজারের এই এলাকার ময়লা ফেলার জায়গাটা তৈরী হয় সিপিএম এর আমলে, তখন কেউ কেন বাঁধা দেয়নি, এখনতো নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হয় পুরসভার উদ্যোগে৷ শুধু করোনা নয় যাতে কোন সংক্রমণ বা ব্যাধি না ছড়ায় তার জন্য যথাযোগ্য ব্যাবস্থা পুরসভার উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে এবং বিশেষ করে করোনার জন্য আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই,পুরসভা সব সময় বনগাঁবাসির কথা মাথায় রেখে চলছে৷ কোন কিছুকেই ছোট করে দেখা হচ্ছে না,এই বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে ৷