দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দু’সপ্তাহ আগে শেষ ধরা পড়েছিলেন কোভিড রোগী। তার পর থেকেই আর কোনও সংক্রমণের খোঁজ মেলেনি গোটা দেশে। নিউ জিল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে এ কথা ঘোষণা করার কিছুক্ষণ পরেই সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডেন জানালেন, নিউ জিল্যান্ড এখন পুরোপুরি করোনামুক্ত। তাই লকডাউন তুলে নেওয়া হচ্ছে। আজ অর্থাৎ সোমবার মধ্যরাত থেকে সে দেশের মানুষজন পুরোপুরি স্বাধীন ভাবে চলাচল করতে পারবেন বলে জানান তিনি। আন্তর্জাতিক গতিবিধি অবশ্য বন্ধই থাকছে, এখনই শুরু হচ্ছে না বিমান পরিষেবা, খুলছে না সীমান্ত।
জেসিন্ডা আজ জানান, দেশজুড়ে সরকারি ও বেসরকারি অনুষ্ঠান, শেষকৃত্য, সামাজিক অনুষ্ঠান, ছোট দোকানপাট, গণপরিবহন ও অভ্যন্তরীণ যাতায়াতে কোনও রকম বাধা থাকছে না। বিশ্বের নবম কোভিড-মুক্ত দেশ হিসেবে সামনে এল নিউ জিল্যান্ডের নাম। ৪০ বছর বয়সি প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা এদিন সংবাদমাধ্যমের সামনে চেপে রাখতে পারেননি আনন্দ। তিনি বলেন, সুখবরটি পাওয়ার পরেই তিনি কন্যা নেভের সঙ্গে একটু নেচেই নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমি লাউঞ্জে নাচছি দেখে আমার মেয়ে খানিকটা অবাক হয়েছে, তার পরে ও-ও নেচেছে। ও অবশ্য জানে না আমি ঠিক কী কারণে নাচছি, কিন্তু ও উপভোগ করেছে খুবই।”
তবে লকডাউন উঠে গেলেও দেশটিতে লেভেল-১ সতর্কতা থাকবে বলেই নিশ্চিত করেছেন জেসিন্ডা। তাঁর কথায়, “নিউ জিল্যান্ড ‘নজিরবিহীনভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে ভাইরাসকে ধ্বংস’ করেছে। তবে এই পরিস্থিতির উপর কড়া ব্যবস্থা না নিলে দেশে আবার কোভিড রোগী দেখা যেতে পারে। সতর্ক থাকলে তবেই আমরা সেরে ওঠার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারব। নইলে সব ব্যর্থ হবে।”
কী ভাবে সতর্কতা জারি থাকবে? প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা উদাহরণ দিয়ে বলেন, গণপরিবহণের ক্ষেত্রে সংখ্যায় কম যাত্রী নিতে হবে, ক্যাফেতে আরও কিছু বেশি টেবিল রাখতে হবে।
নিউ জিল্যান্ডের আগে যে আট দেশ কোভিড ১৯ থেকে মুক্ত হয়েছে সেগুলি হল: ফিজি, মন্টেনেগ্রো, ইরিত্রিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, সিশেলস, হলি সি, সেন্ট কিট অ্যান্ড নেভিস ও পূর্ব তিমুর। গত সপ্তাহে করোনা মুক্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপদেশ ফিজি। জানায়, তাদের সর্বশেষ কোভিড রোগীও সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সোমবার নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীও একই ঘোষণা করার পরে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ফিজির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিমারামা। টুইট করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে নিশ্চয় দেখা হবে তাঁদের।
কিন্তু কীভাবে সম্ভব হল এমনটা? গত ১৯ মার্চ ৩০ জনেরও কম রোগীর খোঁজ মিলেছিল নিউ জিল্যান্ডে। এর পরেই খুবই দ্রুত এবং কড়া ভাবে লকডাউন কার্যকর করে নিউজিল্যান্ড। দেশটি সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। পাঁচ সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শেষে কিছু খাবারের দোকান ও সামান্য কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়। এপ্রিলের শেষ দিকে এসে আক্রান্তের সংখ্যা যখন প্রায় শূন্যে নেমে আসে, তখন দেশটি নিষেধাজ্ঞা আর কিছুটা তুলে নিতে শুরু করে।
পাশাপাশি চলতে থাকে ব়্যান্ডম টেস্ট ও আইসোলেশন। এ দেশে মোট ১৫০৪ জন কোভিড ১৯ রোগী পাওয়া গেছে এবং মারা গেছেন ২২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪৮২ জন। নিউ জিল্যান্ডে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৮ জন মানুষের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে ৫৮ হাজার ৯৪৫ জনের উপর টেস্ট করা হয়। এর পরেই সম্ভব হয়েছে করোনাশূন্য দেশ হিসেবে নবম স্থানে নাম তোলার।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আরও বহুদিন পর্যন্ত সীমান্ত খোলা হবে না। ভাইরাস দমনে দেশের মানুষ যেভাবে একসঙ্গে আপস করেছেন সবকিছুর সঙ্গে, তাতে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন তিনি। সরকারের সমস্ত পদক্ষেপ তারা মেনে চলেছে বলেই এমনটা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কাল থেকে যে কোনও ধরনের সরকারি ও ব্যক্তিগত আয়োজনের অনুষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, গণপরিবহণ– দেশের মধ্যে সব ধরনের ভ্রমণে কোনও বিধিনিষেধ থাকছে না।
কোভিড ১৯ মোকাবিলায় আমেরিকা ও ইউরোপের সরকার যখন হিমসিম খাচ্ছে, তখন এক্ষেত্রে সাফল্যের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল নিউ জিল্যান্ড।