আমপানের তান্ডবে বাগানের সব আম ধূলিসাৎ,লন্ড ভন্ড যশোর রোড

0
2385

পার্থ সারথি নন্দী, বনগাঁ: সকাল থেকেই ঘন কালো মেঘে ঢেকে ছিল আকাশ । সঙ্গে হালকা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া চলছিল।বনগাঁ মহকুমায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে বাড়ল ঝড় ও বৃষ্টির গতি। যশোর রোড, বাগদা রোড এবং চাকদা রোড এমনিতেই লকডাউনে ছিল জনশূন্য,তার উপরে ঝড়ের আতঙ্কে কোন মানুষই ছিলেন না রাস্তাঘাটে।

বিদ্যুৎ সংযোগ চলে গিয়েছিল ঝড় শুরুর অনেক আগেই। যশোর রোডের প্রাচীন গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। গাছের ডাল ভেঙে বনগাঁ,বাগদা, গাইঘাটায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। ডাল ভেঙে  পড়ে ক্ষতি হয়েছে ঘরের চাল। রাতে ঝড়ের তাণ্ডব বাড়ে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ মহকুমার বাগদা, গাইঘাটা, বনগাঁর উপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ তৈরি হয়েছিল। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমপানের লেজের ঝাপটা এই মহকুমায় পড়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় আগে থেকেই তিনটি ব্লককেই সতর্ক করে দেওয়া হয়।’’

বুধবার সকাল থেকেই বনগাঁ পুলিশ, প্রশাসন, পুরসভা, পঞ্চায়েতের তরফে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করে মানুষকে সর্তক করার কাজ শুরু হয়। ঘর থেকে না বেরোনোর অনুরোধ করা হয়। পঞ্চায়েত, পুরসভা ও মহকুমাভিত্তিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।  সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এ দিন দুপুর থেকে যশোর রোডে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। যশোর রোডের দু’পাশে বহু প্রাচীন গাছ রয়েছে। ডাল ভেঙে পড়ে যাতে দুর্ঘটনা না হয়, সে কারণেই এই পদক্ষেপ।

মহকুমায় থাকা বাওর, নদীতে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয় সাধারণ মানুষকে। বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ এবং পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য ও পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ সকাল থেকে পুরসভা এবং পঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাঁচা ভাঙা ও দুর্বল বাড়ি থেকে লোকজনকে তুলে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে আসার কাজ করেন। বিশেষ করে ইছামতীর পাড়ে ও রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের সরানো হয়েছে। ৪ হাজার পরিবারকে স্কুল, সিনেমাহল, লজে তুলে আনা হয়েছে বলে জানান পুরপ্রধান। রাতে সকলকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। গোপাল শেঠ বলেন ছয়ঘরিয়া এলাকার বহু মানুষকে বিভূতি ভূষণ বিএড কলেজে আশ্রয় দেওয়া হয় এবং তাঁদের খাদ্য খাবারের ব্যাবস্থা করা হয়।

বনগাঁ,গাইঘাটা ও বাগদা ব্লকের অসংখ্য মানুষকে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সুত্রে জানাগিয়েছে এদিন ‘‘বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার মানুষকে স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ফ্লাড শেল্টারে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।’’ বাগদা, গাইঘাটা, বনগাঁ থানার পুলিশও মানুষকে সরিয়ে আনার কাজ করেছে এক যোগে। পুলিশ সূত্রে জানাগিয়েছে, গাইঘাটায় প্রায় ৮ হাজার মানুষ এবং আড়াইশো গবাদি পশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। বনগাঁ মহকুমার এক ব্লক আধিকারিক জানান ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ধান এবং সবজী ক্ষেতের।বনগাঁ ছয়ঘরিয়ার এক চাষি কালিপদ দেবনাথ জানান তাঁর জমিতে সমস্ত পটল মাচা ভেঙে ধূলিসাৎ। আমপানের তান্ডবে বাগানের সব আম ধূলিসাৎ।

Previous articleধ্বংস হয়ে গিয়েছে দুই চব্বিশ পরগনা: মুখ্যমন্ত্রী
Next articleআমপানের নজিরবিহীন ধ্বংসলীলা,কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here