দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এবার রেড জোনেও কিছু ছাড় দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। তবে কন্টেনমেন্ট জোনে কোনও ছাড় নেই। কড়া বিধিনিষেধ থাকছে। সর্বত্র লকডাউন কঠোরভাবেই চলবে। তার মধ্যেই শর্তসাপেক্ষে এই ছাড় দেওয়া হচ্ছে। নিয়ম না মানলে পুলিশ আইনমাফিক ব্যবস্থা নেবে।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রেড জোনকে এ, বি, সি— তিনভাগে ভাগ করে নেওয়া হবে। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের রিপোর্টের ভিত্তিতে ঠিক করা হবে কোথায় কী কী খোলা যাবে। জেলা প্রশাসনকে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, তিন দফায় দোকানপাট খুলবে। আজ, বুধবার থেকেই প্রথম দফায় ছাড় দেওয়া হবে। কোথায় কী কী খুলবে তা স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় দফায় ছাড় পাওয়া যাবে ২১ মে থেকে। সবশেষে মিলবে তৃতীয় দফার ছাড়। এই ছাড় কবে থেকে পাওয়া যাবে তা এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়নি। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত, রেড জোন ‘এ’–তে কোনও কিছু খোলা হবে না। রেড জোন ‘বি’–তে সামান্য কিছু ছাড় দেওয়া হবে। রেড জোন ‘সি’–তে বিবেচনা করে অনেকটাই ছাড় দেওয়া হবে। গ্রিন জোনে আন্তঃজেলায় বাস, ট্যাক্সি চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাজ্যের সব জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠক করার পর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন লকডাউনের ফলে রাজ্যের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্রের কাছ থেকে ৫২ হাজার কোটি টাকা প্রাপ্য। মানুষের হাতে কাজ নেই। বিশেষ করে অসংগঠিত ক্ষেত্রও মুখ থুবড়ে পড়েছে। জীবন–জীবিকা রক্ষা করতেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একদিকে করোনা সংক্রমণকে ঠেকাতে হবে, অন্যদিকে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে। পরিকল্পনা ছাড়াই কেন্দ্র লকডাউন ঘোষণা করার ফলে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।’
বিপর্যয় কাটাতে পরিকল্পনা করে এগোতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘শর্ট টার্ম’, ‘মিড টার্ম’ এবং ‘লং টার্ম’ তিনভাগে পরিকল্পনাকে ভাগ করে এগোতে চাইছে রাজ্য সরকার। প্রথমে তিন মাসের জন্য শর্ট টার্ম পরিকল্পনা করে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাজারের মধ্যে নয় এমন দোকান খোলার সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে। এবার জুয়েলারি, ইলেক্ট্রিক সরঞ্জাম, ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান, মোবাইল চার্জের দোকান খুলে দেওয়া হবে।’
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, লকডাউন কঠোরভাবেই চলবে। তার মধ্যেই শর্ত সাপেক্ষে এই ছাড় দেওয়া হচ্ছে। নিয়ম না মানলে পুলিশ আইনমাফিক ব্যবস্থা নেবে। রেস্তোরাঁ ছাড়া অন্যান্য খাবারের দোকান খোলার সিদ্ধান্তও এদিন ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বেলা ১২টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খাবারের দোকান খোলা রাখা যাবে। তবে বসে খাওয়া যাবে না। খাবার কিনে বাড়ি চলে যেতে হবে। চা এবং পানের দোকানের ক্ষেত্রে যে নিয়ম চালু করা হয়েছিল, সেই নিয়মই থাকবে। ভিড় করা যাবে না। আলুর চপ, রোলের দোকান খুলুক। মানুষের কিছু রোজগার তো হবে। হোম ডেলিভারি আগেই চালু করা হয়েছিল। সেটাই চালু থাকবে। সকালের দিকে খাবারের দোকান খোলা থাকলে বেশি ভিড় হয়ে যাবে।
তাঁতের কাজ বুধবার থেকেই শুরু করে দেওয়া যাবে। খোলা থাকবে বিশ্ব বাংলা হাট ও খাদি বাজার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের প্রয়োজনীয় জামাকাপড় তাঁতিরা বানান। ইতিমধ্যেই ৩ বছরের অর্ডার তাঁতিদের দেওয়া হয়েছে। সেই কাজ যাতে তাঁতিরা শুরু করতে পারে তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
বন্দরের সঙ্গে যুক্ত কাজকর্ম শুরু করে দেওয়া হয়েছে। আমদানি–রপ্তানির কাজও শুরু করা হবে। আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
টলিউডের জন্য সুখবর। ফিল্ম এবং টেলিভিশন ইউনিটের এডিটিং, মিক্সিং এবং ডাবিংয়ের কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চলচিত্র শিল্পের সব ইউনিয়ন মিলে ঠিক করেছে শুটিংয়ের কাজ আরও কিছুদিন পর শুরু করা হবে।’
জেলার মধ্যে বাস, ট্যাক্সি চলাচলে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আন্তঃজেলার ক্ষেত্রে কীভাবে বাস চলবে তা ঠিক করবে পরিবহণ দপ্তর। দু–একদিনের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। ১০০ দিনের কাজের ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে। প্রত্যেক জেলাতে ১০০ দিনের কাজে আরও বেশি করে লোক নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় আটকে থাকা সব প্রকল্পের কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জেলাশাসকদের নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে কোথায় কোন প্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে। কোথায় কীভাবে ১০০ দিনের কাজ বাড়ানো যাবে। গ্রামীণ সড়ক যোজনা, বাংলা আবাস যোজনার কাজ শুরু করে দিতে বলা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি, পূর্ত, কৃষি, সেচ, মৎস্য, উদ্যানপালন, প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের কাজ শুরু করে দিতে বলা হয়েছে। এতে ১০০ দিনের কাজ বাড়বে। মানুষ বেশি বেশি করে কাজ পাবেন।
ঘরে ফেরা শ্রমিকেরাও ১০০ দিনের কাজ চাইলে দিতে হবে। কাজ করতে যাঁরা আসবেন, তাঁদের পুলিশ সবরকম সহযোগিতা করবে।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা জেলাশাসককে দেখতে বলা হয়েছে।’
জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, রেড জোন থেকে যাতে দ্রুত বেরোনো যায় তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সবাই যাতে মাস্ক পরেন তা দেখতে হবে। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। সমস্যা হলে প্রশাসনকে জানাতে হবে।