অমিত শাহের নির্দেশে গুলি চলেছে বনগাঁ দক্ষিণে বললেন মমতা: দিদির উস্কানিতেই তার গুন্ডারা এসব করেছে শিলিগুড়িতে তীব্র আক্রমণ মোদীর

0
866

দেশের সময়: কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মাথাভাঙায় চার জন গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাকযুদ্ধ চরমে উঠল শনবাসরীয় মধ্যাহ্নে। শিলিগুড়ির সভা থেকে এই ঘটনায় সরাসরি মমতার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মোদী। পাল্টা বনগাঁর সভা থেকে মমতা বললেন, অমিত শাহের নির্দেশে গুলি চালিয়ে চার জনকে মেরে ফেলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই সভা থেকে দিদি এও জানিয়ে দিলেন, আগামীকাল তিনি ঘটনাস্থলে যাবেন। দলের উদ্দেশে দিদির বার্তা, আগামীকাল সারা রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে এই ঘটনার প্রতিবাদে কালো ব্যাজ পরে মিছিল করবে তৃণমূল। দাবি তোলা হবে, অমিত শাহের পদত্যাগ চাই।

চতুর্থ দফার ভোট যখন চলছে তখন শিলিগুড়িতে জনসভা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলায় চতুর্থ দফার নির্বাচনে ভোটপ্রচারে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

মাথাভাঙার ঘটনা নিয়ে এদিন তীব্র তোপ দাগেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোচবিহারে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। আমি মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।  গোটাটা করেছে দিদির গুন্ডাবাহিনী। আমি কমিশনকে অনুরোধ করব দোষীদের শাস্তি দিন।” এখানেই থামেননি মোদী। আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়িয়ে বলেন, “সুরক্ষাবলের উপর হামলা করার উস্কানির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। দিদি, এই হিংসা আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না।”

বিজেপি-র সমর্থন দেখে দিদি ও তাঁর গুন্ডারা এসব করছেন। দিদি, আপনার কুর্সি চলে যাচ্ছে। দিদি, তাঁর গুন্ডাকে সাফ কথা বলছি, বাংলায় এসব চলবে না। হিংসা আপনার রক্ষা করবে না।’ উল্লেখ্য, চতুর্থ দফার ভোটে কোচবিহারে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মমতাকে নিশানা করে এদিন ফের ‘দিদি, ও দিদি’ বলে সরব হন মোদী। নমো বলেন, ‘যদি যেতে হয়, আপনি এবার চলে যাবেন। তোলাবাজ চলে যাবে, সিন্ডিকেট চলে যাবে’। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন আমি চা ওয়ালা। গোটা উত্তরবঙ্গ আমায় অনেক অনেক আশীর্বাদ দিয়েছেন। তৃণমূল সরকার যাচ্ছে, বিজেপি সরকার আসছে। প্রথম তিন দফার ভোটে বাংলায় বিজেপি-র পক্ষে বাম্পার ভোট পড়েছে।’

মমতাকে বিঁধে মোদী আরও বলেন, ‘দিদির মন্ত্রীরা হুমকি দিচ্ছেন। বাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষকে আপনি উস্কানি দিচ্ছেন। বাংলা দিদির জমিদারি চলবে না। দিদি বাংলাকে বরবাদ করেছেন।’ তৃণমূলনেত্রীকে টার্গেট করে মোদী বলেছেন, ‘১০ বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতায় থেকে দিদি জনগণকে শেখাচ্ছেন, কীভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করতে হয়, হামলা করতে হয়।’

মমতাকে আক্রমণ করে মোদীর কটাক্ষ, ‘এবারের ভোটে ছাপ্পা ভোট দিতে পারছেন না বলে অসন্তুষ্ট দিদি। সভায় ভিড় দেখে দিদি বলছেন, সবাই নাকি পয়সার বিনিময়ে এখানে এসেছেন। আপনারাইউ বলুন, কারওর থেকে টাকা নিয়েছেন?’ নমো বলেন, ‘বিজেপি সরকার বাংলায় এলে দিনরাত কাজ করবে। ভয় পাবেন না, আমরা আপনাদের পাশে আছি। নতুন বছরে নতুন বাংলা তৈরি হবে। ‘


কয়েকদিন আগেই মমতা বেশ কয়েকটি জনসভায় বলেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে ধরুন। দিদি এও বলেছিলেন, “বিজেপি মারছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মারছে— আমি কোনও ন্যাকা কান্না শুনতে চাই না। ওরা মারছে তো আপনিকী করছেন? ঘিরে ধরুন। আমি তো মারামারি করতে বলছি না। প্রতিবাদ করুন।”

মমতার এই মন্তব্য নিয়ে নির্বাচন কমিশন তাঁকে শো-কজও করেছিল। এদিন সকালেইতার জবাব দিয়েছেন তৃণ্মূল নেত্রী। দুপুরে বনগাঁর মাটি থেকে পাল্টা গর্জে উঠলেন মমতা।
তাঁর কথায়, “অমিত শাহের নির্দেশে এতগুলো লোককে কেন্দ্রীয় বাহিনী মেরে দিয়েছে।” গতকালই মমতা বলেছিলেন, এমন গুন্ডা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগে দেখিনি। এদিন গোটা দলকে অমিত শাহের পদত্যাগের দাবিতে পথে নামতে বললেন মমতা। তাঁর কথায়, কাল ভোট নেই। যেখানে ভোট আছে বা হয়ে গেছে—সব জায়গায় কাল কালো ব্যাজ পরে মিছিল করতে হবে। একই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা, রবিবার তিনি মাথাভাঙায় যাবেন। মমতা এদিন স্পষ্ট করে বলেছেন, দিল্লির পুলিশ গুলি চালিয়েছে।

মমতার এই বক্তৃতার আগে এদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন এবং ডে রেক ও’ব্রায়েন। দোলা বলেন, “এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না। এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না। মাথাভাঙায় যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য বাংলার মানুষ নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে শো-কজ করছে।”

এদিন মাথাভাঙা ১ ব্লকের শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রে শনিবার সকাল থেকেই বিচ্ছিন্ন গন্ডগোলে তেতে রয়েছে। বেলা দশটা নাগাদ এখানেই একটি বুথে গন্ডগোলের খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়, তখন তাদের ঘিরে ধরে প্রায় চার পাঁচশো লোক। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ। তখনই গুলি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চারজনের। বাহিনী গুলি চালাতে শুরু করায় নিমেষে ফাঁকা হয়ে হয়ে যায় গোটা এলাকা।


কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চারজনের মৃত্যুর খবর আসতেই তুমুল উত্তেজনা সৃষ্টি হয় জোড়পাটকি এলাকায়। কান্নার রোল ওঠে নিহতদের ঘরে ঘরে। দিনকয়েক আগেই কোচবিহারে নির্বাচনী সভা করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলতে। তাই নিয়েই কমিশন শো-কজ করেছিল তৃণমূলনেত্রীকে।

Previous articleরক্তাক্ত শীতলকুচি, গুলিতে মৃত ৪ , কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলল গ্রামবাসীরা
Next article‘দিদির রাগ আকাশ ছুঁয়েছে’, মমতাকে কটাক্ষ নরেন্দ্র মোদীর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here